Lock down day 28

আজকে কিছু বাজার সদায় করতে ও ঔষধ কিনতে বাইকটা নিয়ে বের হয়েছিলাম। এতদিনের পরিচিত রাস্তাটাকে আজ কেমন অপরিচিত লেগেছে। ফ্লাইওভারে উঠে দেখলাম ময়লা পড়ে আছে তবে আশা থেকে বেশি ছিল যানবাহন।
রাস্তার কুকুরগুলোকে রাস্তাতেই শুয়ে থাকতে দেখলাম। সরছে না। হয়ত ভুলে গেছে এটা রাস্তা বা হয়ত ধরেই নিয়েছে এসব রাস্তায় আর মনে হয় আগের মত গাড়ি ছুটবে না…হাহাহাহাহা…বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করছিলাম, এত মানুষের সংস্পর্শ থেকে কিভাবে বাচা যায়? একজন পুলিশ বাইক নিয়ে এসে দাড়ালেন, কিছু বললেন না কারণ নিজেই চট করে কলা কিনে নিয়ে বাইকে করে চলে গেলেন। আমিও যা না নিলেই নয়, তার একটা লিস্ট করে ফেললাম আর্মির গাড়ির পাশে দাঁড়িয়েই আর লিস্টটা এক ছুটে গিয়ে দোকানদারকে দিয়ে দোকানের বাহিরে এসে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম। সবকিছু প্যাক করা শেষ হতেই টাকা পরিশোধ করে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাটা দিলাম। এসে বিশাল কেচালে পড়ে গেলাম, এই ব্যাগ কেমনে বাইকে নিমু। কি আর করা, সিএনজি নিলাম। বাইকটা আর্মি ভাইদের একটু দেখতে বললাম।
বাসার সামনে বাজার রেখে আবার চলে আসলাম। শান্তি… এখন কেবল মেডিকেলের সামনে যাব আর কিছু করার নাই। আগে বিভিন্ন অলিগলি মেরে দিতাম, জ্যাম এড়াতে, এখনো অভ্যাস বশত সেসব গলিতে গিয়ে দেখলাম বন্ধ করে দিয়েছে…হাহাহাহা…স্বেচ্ছা বন্দি সবাই…ঘুরে ঘুরে যেতে হলো কিন্তু কোথাও একটুও জ্যাম নেই…ঔষধ নিলাম…।।আবার ঘুরে ঘুরে ফিরে আসছি…মিডিয়ান গ্যাপে দাঁড়িয়ে আছি কারণ দেখলাম বাইক আসছে কিছু বেশ জোরেই…পেছন থেকে এক রিকশা ওয়ালা আমাকে তাগাদা দিলেন, ‘ভাই দাড়ায়ে আছেন কেন? যান’…আমি ওনাকে আগে যেতে ইশারা করলাম…কেন যেন আমার প্রায়শই এমন হয় মিডিয়ান গ্যাপে…বিশেষ করে লালখানবাজার মিডিয়ান গ্যাপটাতে…যাই হোক, খালি রাস্তায় কেন যেন এই গ্যাপগুলো ভীষণ অস্বস্তি জাগায়…শেষ পর্যন্ত ইউ টার্ন নিয়ে ফ্লাইওভার হয়ে এলাকাতে আসলাম।
এলাকার গেইট বন্ধ, একজন এসে খুলে দিলেন…ঢুকতে যাব, দেখলাম পরিচিত একজন সালাম দিলেন। দাড়াতে বললেন ইশা্রায়…দেখি একটা বোতল নিয়ে আসছেন। হাতে স্প্রে করলেন, পেছনে কিসে যেন স্প্রে করলেন, তারপর ঢুকতে বললেন। ভাল লাগল…

হয়ত কিছুই হবে না, হয়ত কোন ভাইরাস যাবে না কিন্তু ভাল লাগল…মনে মনে বললাম, আমরা সচেতন হলে কি না সম্ভব আমাদের দ্বারা। আমরা প্রতিবাদী জাতি, মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়াতে জানা জাতি, যেখানে যে অস্ত্র ব্যবহার করা দরকার সেখানে সেটা করতে জানি আমরা…তাই, যে যেভাবে করেছেন এই বিপদ মোকাবেলার কাজ, এখনো করছেন প্রত্যেককে ধন্যবাদ…
ধন্যবাদ দিচ্ছি যেন আপনাদের হাত ধরে বেচে থাকে বাংলাদেশ..

আজকালতো আমরা কারো প্রশংসা করতে পারিনা ‘তেল মারতেছে’ এই কথা শোনার ভয়ে…আর প্রশংসা না করতে করতে ভুলেই গেছি এটা কি জিনিস…কেবল দোষ ধরতেই ব্যস্ত আজকাল আমরা, কেবল পরীক্ষা নিতেই ব্যস্ত আজকাল আমরা, কেবল যে কোন কাজের ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে চুলে চেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত আমরা সবাই…হাহাহাহা… আমিও এর ব্যাতিক্রম নই।
আমাদের পরিবর্তণ হবে আশা করি…আমরা আবারো বুঝতে শিখবো, আমাদের কি আছে? সেটাকে কিভাবে আরো ভাল করা যায়…যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত হতে পারার মাঝে একধরনের স্বস্তি আছে…আর যা চাই তাতে আছে অনিশ্চয়তা আর অস্বস্তি…স্বস্তি ও অস্বস্তি, এই দুইয়ের মাঝের সমতা আসুক…

সমতা আসুক সবার জীবনে…

বিঃদ্রঃ লকডাউন ডে কি ২৮ আসলে???…😆😆

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.