Tag Archives: roadrollerz

আমার বাইকিং

লেখাটি আমার বাইকিংকে ঘিরে। অভিজ্ঞতা নয় বরং আমি কিভাবে দেখি তারই একটি চিত্র আপনি দেখতে পাবেন। আশা করি আপনিও নিজের ধারণার সাথে মিলিয়ে নিতে পারবেন এবং বাইকিং জীবনকে নতুনভাবে খুজে পাবেন।

একটি স্বপ্নের মোটরসাইকেল

আমরা সবাই-ই কম্ বেশি এখান থেকেই শুরু করেছি। এভাবে সেভাবে যেভাবেই হোক একটি স্বপ্ন তাড়িত করেছে প্রতিনিয়ত। একটি বাইক, যেন কেবল বাহন নয়, নিজের একটি অঙ্গ। নিজের একটি ভিন্ন অস্তিত্ব। যেন এক ভিন্ন মোহ, নেশা। কিন্তু সব মিলিয়ে কেন যেন দিন দিন স্বাদ কমতে থাকে। কারণ আজকে এই বাইক ভাল লাগে তো কাল আরেকটা। এই বাইকের পাওয়ার ভাল লাগে তো, আরেকটার সৌন্দর্য্য কিংবা আরেকটার এক্সহস্টের শব্দ। তাই কেউ কেউ একের পর এক বাইকে কিনতেই থাকে, আজকে এটা তো কাল আরেকটা।
তাই নিজেই নিজের স্বপ্নের বাইকটি দিনের পর দিন গড়ে তোলার যে আনন্দ তা মনে হয় না আর কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব আমার পক্ষে। কখনও নিজ হাতে, কখনও আর কাউকে দিয়ে দিনের পর দিন, প্রতিনিয়ত এই কাট ছাট করার যে নিরলস প্রক্রিয়া, তা কি কেবল টাকা দিয়ে বাইক কিনে কোনদিন খুজে পাওয়া সম্ভব। যে বা যারা একবার এই স্বাদ পেয়েছেন তাদের আর বাইকিং ফুরোবার নয়। কারণ যে বাইকটি এক সময় কেবলই একটি মেশিন ছিল তা দিন দিন শেকড় গজিয়ে আষ্টেপিষ্টে আপনাকে জড়িয়ে এক মহিরুহ প্রাণবন্ত বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। যেন শিল্পীর তুলির আচড়ে প্রান পাওয়া একটি ক্যানভাস। যার প্রতিটি অংশের পেছনে আছে এক একটি গল্প, শ্রম, অপেক্ষা, আশা-হতাশা, উদ্দেশ্য। কিছুই যেন উদ্দেশ্যবিহীন নয়। এমনকি বাইকের উচ্চতা থেকে শুরু করে নাম্বার প্লেটটি পর্যন্ত।
It’s a long game and only a handful can play it. You can win or lose, it matters very little in the end, what matters the taste it left in you, a lifetime of exhilarating experience. A continuous excitement of success and failure.

কেউ ছুটে চলেছে পার্ফরমেন্স নিয়ে, কেউ সৌন্দর্য্য নিয়ে, কেউ ভ্রমণ করার জন্যে, কেউ যে কোন রাস্তা দিয়ে চলার জন্যে, কেউ বা স্টান্ট করার জন্যে, কেউবা আরো নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে। কাউকে ফেলে কাউকে আপনি এগিয়ে রাখতে পারবেন না।

দিনের পর দিন এভাবে সেভাবে যেভাবেই হোক গড়ে তুলেছেন কিংবা গড়ে তুলছেন আপনার একান্ত নিজের একটি স্বপ্নের বাইক। বাজার থেকে কিনে আনা নয়, নিজে পছন্দ করে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে নিজের করে গড়ে নেয়া একটি স্বপ্নের মোটরসাইকেল।
আর এই স্বপ্ন যেন ফুরোবার নয়…

কোনঠাসা, একগুয়ে মানসিক গঠন

ছকে বাঁধা জীবন। হাসফাস করে নিজেকে মেলে ধরতে। সব আছে তবুই কিসের যেন অপূর্নতা, কোথায় যেন এক শুন্যতা। দূর থেকে যেন ভেসে আসে এক চাপা ক্রন্দনরত সুর। কেবল এই পয়েন্টলেস যান্ত্রিক জীবনটাকেই কি টেনে নিয়ে যেতে হবে? বাকিটা সময় কি একই কবিতা বারবার লিখে যেতে হবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে। একই শব্দ, একই ছন্দ, একই তাল, একই গঠন, একই আবেগ, একই স্বাদ, একই সবকিছু। মন চায় সব ছেড়ে ছুড়ে বের হয়ে যেতে কিন্তু বের হওয়া হয়ে উঠে না। কোন ফাকে যেন হারিয়ে গিয়েছে সেই কৈশোরের সাহস কিংবা নতুনকে আঁকড়ে ধরার প্রেরণা। ফলশ্রুতিতে দিন দিন কোনঠাসা একগুয়ে মানসিকতা ক্লান্ত করে তুলেছে ভেতরে ভেতরে। পুরনো ছাত্রজীবনের সেই হাস্যোজ্জ্বল সময়গুলো মাঝে মাঝে স্বপ্নের মতই এসে উঁকি দেয়। আপনি বড় হয়েছেন ঠিকই কিন্তু হারিয়ে ফেলেছেন আপনার নিজেকেই। কোথায় যেন যাবার কথা ছিল?

এরকম একটি পয়েন্ট থেকেই আমার বাইকিং শুরু, আরো অনেকেরই শুরু হয়েছে এভাবে। কিংবা ভিন্ন কোন পথে। যেভাবেই গল্পের শুরু হোক না কেন, আমরা কেউই একা বা একমাত্র নই। দুই চাকার জগতে না আসলে এই কথাটা হয়ত অজানা থেকে যেত আমার কাছে। সবকিছুতেই আমার মত আরো অনেকেই আছে, থাকবে, আসতেই থাকবে। নিজেকে একমাত্র বা একা ভাবার কিছুই নেই এখানে। কোণঠাসা করে রাখার উপায় নেই এখানে। কারণ আপনার আমার মত মানুষ আছে, আসতেই থাকবে একের পর এক। যতদিন যাবে তত আপনার আমার মত মানুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। নিজেকে সবার উপরে ভাবার উপায় নেই এখানে। ভাবছেন আপনিই একা করছেন কিংবা আপনিই প্রথম। অবাক হবেন যে আরো কত মানুষ করে গেছে যা আপনি আজকে করছেন কিংবা করার কথা ভাবছেন।

দীর্ঘদিনের বাইকিং জীবন আমার মতই আপনাকেও একগুয়েমি থেকে মুক্তি দেবে। ঔদ্ধ্যতাকে ঝাটা দিয়ে পিটিয়ে বিদায় করে দিবে। নিজেকে সেরা ভাবতে ভাল লাগে, বাইকিং এখানে আপনার মানসিকতার পরিবর্তণ এনে দিবে। মোদ্দা কথা, বাইকিং আপনাকে প্রশস্ত মন মানসিকতার করবে। আর এ জন্যই বলা হতো,

“Four wheels move a body, Two wheels move a soul.”

অনেকেই কথাটার অর্থ পাঠোদ্ধার করতে ব্যার্থ হন।

Biking somewhat cleanse your soul if you truly love biking and be diligent about it.

নেশা, পেশা, রেশারেশি, ঠেসাঠেসি


নেশা কি বাইকিং্যের নাকি ফেইমের?

নেশা কি বাইকের নাকি দৃষ্টি কাড়ার?

নেশা কি মোটরসাইকেল নাকি মডেলিং্যের?

বাইকিং নাকি ব্যবসা?

বাইকিং নাকি নিজেকে প্রমাণ করার নেশা?

বাইকিং নাকি মৃত্যুযাত্রা?

বাইকিং কি পেশার? তাহলে রাইড শেয়ার কি?

বাইকিং কি ভ্রাতৃত্বের নাকি রেশারেশির?

বাইকিং কি চরিত্রের স্খলন বা চারিত্রিক অধঃপতন নাকি চরিত্রের গঠন?

বাইকিং কি একঘেয়ে অনমনীয়তা নাকি নতুনত্বের ছোঁয়া?

বাইকিং কি পোশাক যে নারি-পুরুষের জন্য ভিন্ন?

বাইকিং কি শারিরীক গঠন, যে নারী বাইকার বনাম বাইকার নামকরণ?

এমন হাজারো নানা প্রশ্ন আপনাকে দিনশেষে বাইকিং আপনার সামনে তুলে ধরবে। এর সব উত্তর আপনি আমি কেউই দিতে পারবো না কারণ দিন শেষে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। তবে যে যেভাবেই প্রশ্নগুলোর উত্তর করুক না কেন, যে যেভাবেই বাইকিংকে চেটেপুটে, লুটেপুটে, সর্বনাশ করুক না কেন? যে যেমনে ইচ্ছে দেহ পাবি মন পাবি না শয়তানী কাজে বাইকিংকে ব্যবহার করুক না কেন, আপনার বাইকিংকে আপনার মত করে সুরক্ষিত রাখার কাজটা আপনারই। আপনার বাইকিং হয়ত সব প্রশ্ন আপনাকে ছুড়ে দেবেনা, সে হয়ত কেবলই বাইকিং কি নেশা না পেশা প্রশ্নের উত্তর খুজবে আপনার কাছে। হয়ত আমার কাছে খুজবে ভিন্ন কোন প্রশ্নের উত্তর যা আপনার সাথে হয়ত মিলবে না কিন্তু কারো না কারো সাথে মিলবে।

বাইকিং্যের দোষ দেয় সবাই। গতি ক্ষতি, নাতি পুতি নিয়ে টানাটানি করে, কেউবা কারো বউ বা নারী নিয়ে কিংবা প্রচলিত রীতিনীতি, নিয়ম কানুন নিয়ে। আপনার বাইকিং আপনাকে নিঃস্ব করতে পারে কিংবা করতে পারে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু কিংবা কাউকে জীবনের উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে কিংবা চারিত্রিক চরম অধঃপতনের পথে, তবে মনে রাখবেন আপনি একা নন, একমাত্র নন। বাইকিং কেবল একটি নির্দিষ্ট স্থান, পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। আপনার আর আমার বাইকিং তাই কখনই এক নয়। বাইকিং্যের সমস্যা নয় বরং বাইকারের সমস্যা বলতে শুরু করুন।

বাইকিং থেকে আপনি কি নিচ্ছেন?

যে যা ইচ্ছা করুক এই বাইকিং নিয়ে, কিন্তু আমার বাইকিং কখনই কলুষিত নয়। আর তা যেন না হয় তার দায়িত্ব আমার নিজের।


নারীলিপ্সা মেটাতে বাইকিং, বাইকিং করা নয়, এটা নিজের লিবিডোর চাহিদাপূরণ কেবল।


সাদা পানি – লাল পানি গলাধকরণ করতে বাইকিং করাটা, বাইকিং নয়, এটা সিএনজি ভাড়া করে মদ্যপান করতে গিয়ে, মদ খেয়ে নিজেকে সিএনজি চালক ভাবারই সামিল।

বাইকিং্যের নামে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়াটা বাইকিং নয়, বরং বাইকিং্যের পরিবেশকে দূষিত করার জন্য আবাসিক এলাকায় দেহব্যবসা খুলে টাকা কামানোর সামিল।

কেবল কথা দিয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করাটা বাইকিং নয় কারণ বাইকের পাশে দাড়ায়ে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে কি হবে যদি নিজের ভেতরটাকেই সুন্দর করতে না পারলেন, এই হিপোক্রেসি কার সাথে করছেন? হিপোক্রেসি কি বাইকিং?

জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশান থেকে বের না হয়ে বাইকিং্যে এনে এই লিংগ বৈষম্যকে পুজি করে যারা নাম যশ খ্যাতির চর্চা করছেন, বাইকিং আপনাদের জন্য সুন্দর না। এটা বাইকিং নয়।

বাইকিং্যের নামে নিজের শরীর প্রদর্শন বাইকিং নয়, কুরুচিপূর্ন মডেলিং আর যাই হোক বাইকিং নয়।

টাকা কামানো টাকা কামানো সেটা বাইকিং নয়।

আবার চাইলে এগুলো সবগুলোকে নিয়েও বাইকিং সাজিয়ে আপনি দিব্যি নাকে তেল দিয়ে মনের আনন্দে তেল পুড়িয়ে, অর্থ, সময়, শ্রম ব্যায় করে নিজের মনের মত করে সাজিয়ে নিতে পারেন নিজের বাইকিংকে, নিতে পারেন আত্মিক প্রশান্তি, পরিশুদ্ধি আনতে পারেন নিজের ও নিজের মানসিকতার।


তাই কে কি করলো তা না দেখে বরং আপনি নিজে কি করলেন তা দেখুন, তখনই বাইকিং প্রকৃত অর্থেই will move your soul… আপনার আত্মিক প্রশান্তি এনে দিবে, এনে দিবে শুদ্ধতা, পরিণত করে তুলবে সুন্দর মনের একজন সুন্দর মানুষে।

নিজের আত্মিক পরিশূদ্ধি আনার একটি মাধ্যম হোক এই বাইকিং।

Rolling2Wheels

ভাল থাকবেন।